জয়পুরহাট জেলার অভ্যুদয়

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় জয়পুরহাট জেলার অভ্যুদয়।

জয়পুরহাট জেলার অভ্যুদয়:-

১৯৭১ সালে জয়পুরহাট জেলা (তৎকালীন জয়পুরহাট মহুকুমা) ৭ নং সেক্টরের অধীনে ছিল। এই সেক্টরটি নিয়ন্ত্রণ করতেন মেজর নাজমুল হক বীর উত্তম (১৮ মার্চ ১৯৭১ – ২৭ সেপ্টেম্বর ১৯৭১) এবং মেজর কাজী নূরুজ্জামান বীর উত্তম (২৭ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ – ডিসেম্বর ১৯৭১)। স্বাধীনতা পরবর্তী জরিপে সরকারি তথ্য অনুযায়ী এই জেলায় মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন ৭৩৯ জন।

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে দেশের সর্ববৃহৎ যুদ্ধ হিলির মুহাড়াপাড়া এলাকায় হয়েছিল বলে দাবি এখানকার মুক্তিযোদ্ধাদের।

 

জয়পুরহাট জেলার অভ্যুদয়
পাগলা দেওয়ান বধ্যভূমি – জয়পুরহাট জেলা

 

যুদ্ধ চলাকালীন এখানে প্রায় ৭ হাজার পাক সেনা নিহত হয়। শহীদ হন প্রায় ১৩শ মুক্তিযোদ্ধা এবং মিত্র বাহিনীর ৩৫৭ জন সেনা সদস্য আহত হন প্রায় ১৪শত জন।প্রচণ্ড যুদ্ধের পর ১১ ডিসেম্বর ৭নং সেক্টরের আওতায় দিনাজপুরের হিলি শত্রু মুক্ত হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় বিভিন্ন স্থানে সম্মুখ ও গেরিলা যুদ্ধে হাকিমপুর উপজেলার বোয়ালদাড় গ্রামের মোস্তফা, একরাম উদ্দিন, বানিয়াল গ্রামের মুজিব উদ্দিন শেখ, ইসমাইলপুর গ্রামের মনিরুদ্দিন, মমতাজ উদ্দিন, বৈগ্রামের ইয়াদ আলী ও চেংগ্রামের ওয়াসিম উদ্দিন শহীদ হন।

হিলি সীমান্ত দিনাজপুর এবং ভারতের পশ্চিম দিনাজপুরের প্রধান যোগাযোগ কেন্দ্র হওয়ায় উক্ত অঞ্চল রণকৌশলগত কারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় এই অঞ্চল দখল করার জন্য তারা মরিয়া হয়ে উঠে। ১৪ এপ্রিল ১৯৭১ তারিখ থেকেই তারা হিলিকে দখল করার প্রচেষ্টা চালায়।

 

google news
গুগোল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

এক পর্যায়ে ১৯ এপ্রিল (মঙ্গলবার) বিকালে হানাদার বাহিনী হিলিতে অবস্থানরত ৩ ইস্ট বেঙ্গলের ক্যাপ্টেন আনোয়ার আলফা কোম্পানী ও ছাত্র জনতা মুক্তিযোদ্ধার উপর ত্রিমুখী আক্রমণ করে। হানাদার বাহিনীর প্রচণ্ড আক্রমণে টিকে থাকতে না পেরে ক্যাপ্টেন আনোয়ারের দল ছত্রভঙ্গ হয়ে সন্ধ্যার দিকে ভারতের অভ্যন্তরে বকশীগঞ্জ আম বাগানে অবস্থান নেয়।

এই যুদ্ধে ৩ ইস্ট বেঙ্গলের ৬ জন সৈনিক মৃত্যুবরণ করেন। এ অবস্থায় ২১ এপ্রিল ১৯৭১ তারিখে হানাদার বাহিনী হিলি দখল করে নেয় এবং চারদিকে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে।

পাকিস্তানি বাহিনীর ৪ ফ্রন্টিয়ার ফোর্স ব্যাটালিয়ন হিলি এলাকায় কংক্রিটের বাঙ্কার নির্মাণ করত, এখানে খুবই জোরালো প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলে। হানাদার বাহিনীর সেনারা প্রায়ই পার্শ্ববর্তী এলাকায় নারী ধর্ষণ, লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগ ছাড়াও বাঙ্গালীদেরকে ধরে এনে এখানে নির্মম নির্যাতন করত।

 

জয়পুরহাট জেলার অভ্যুদয়
আছরাঙ্গা দীঘী – জয়পুরহাট জেলা

 

এক পর্যায়ে ২১ নভেম্বর ১৯৭১ তারিখে মুক্তিবাহিনীসহ যৌথ বাহিনী কর্তৃক হানাদার বাহিনীর উক্ত ঘাঁটি উৎখাত করার জন্য প্রচণ্ড আক্রমণ চালানো হয়। এই আক্রমণের সময় ভারতীয় বিমান বাহিনী গোলা বর্ষণ করেও শত্রুর শক্ত প্রতিরোধ ব্যবস্থা প্রথমে ধ্বংস করতে পারেনি।

বরং এদিন মিত্রবাহিনীর অনেক সৈন্য মৃত্যুবরণ করেন। পরবর্তীতে ৯ এবং ১০ ডিসেম্বর ১৯৭১ তারিখে ভারতীয় ২০২ নং মাউন্টেন ব্রিগেডের নের্তৃত্বে যৌথবাহিনী অবিরাম আক্রমণ চালিয়ে বহু মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনী সেনাদের জীবনের বিনিময়ে দখলদার বাহিনীকে পরাজিত করে। অবশেষে ১১ ডিসেম্বর ১৯৭১ তারিখে এই হিলি অঞ্চল শত্রু মুক্ত হয়।

আরও পড়ুনঃ

Leave a Comment