বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য গুলি খেয়েছেন। শৌর্যের জন্য মিলেছে একাধিক সম্মাননাও। কিন্তু মৃত্যুর পরে সামান্য সম্মানটুকুও জুটল না বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা বাসুদেব সরকারের। বৃহস্পতিবার বগুড়া হাসপাতালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় বছর ৭৮-এর মুক্তিযোদ্ধার। কিন্তু তাঁর দেহ জয়পুরহাটের বাড়িতে আনার পরেও বিজিবি বা বাংলাদেশ প্রশাসনের তরফে গার্ড অফ অনারটুকুও দেওয়া হল না। ইউনূস সরকারের এই উদাসীনতায় হতাশা ও ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন কর্ণজোড়ায় বসবাসকারী পরিজনেরা।
মৃত্যুর পরেও ন্যূনতম সম্মান মিললনা মুক্তিযোদ্ধা বাসুদেব সরকারের, ক্ষুব্ধ পরিজনরা
মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতোর মালা, বাংলাদেশে এই ছবি ঘিরে কয়েকদিন আগেই বিতর্ক ছড়িয়েছিল। এবার এক মুক্তিযোদ্ধা মৃত্যুর পর পেল না ন্যূনতম সম্মাননা, ঘটনায় নিন্দায় সরব হয়েছে সকলেই। বাংলাদেশে অস্থির পরিস্থিতির মধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়েন জয়পুরহাট থানাপাড়ার বাসিন্দা তথা মুক্তিযোদ্ধা বাসুদেব সরকার (৭৮)। বৃহস্পতিবার সকালে বগুড়া হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায় মৃত্যু হয় তাঁর। এদিন দুপুরে ওই মুক্তিযোদ্ধার মৃতদেহ নিয়ে আসা হয় জয়পুরহাটের বাড়িতে।

এতদিন বাংলাদেশ সরকারের নিয়ম ছিল, মৃত মুক্তিযোদ্ধার শরীর বাংলাদেশের পতাকায় জড়িয়ে তাঁকে গার্ড অফ অনার দেওয়া । তাঁর শেষকৃত্য পর্যন্ত পুলিশ ও বিজিবি থাকত। কিন্তু মৃতের স্ত্রী প্রতিমা সরকারের অভিযোগ, ‘এদিন সকালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হলেও দিনভর পুলিশ থেকে শুরু করে বিজিবি বা প্রশাসনের কোনও কর্তাকে দেখা যায়নি।’
তাঁর আক্ষেপ, ‘আমার স্বামী বাংলাদেশকে স্বাধীন করার জন্য গুলি খেয়েছিল। কিন্তু মৃত্যুর পর সামান্য সম্মানটুকু পেল না। বাড়ি থেকে মাত্র ১০০ মিটার দূরেই জয়পুরহাট থানা, সেই থানার কোনও পুলিশ অফিসারও বা প্রশাসনের তরফে খোঁজটুকু নেওয়া হলো না।’

উল্লেখ্য, তিনি দীর্ঘদিন ট্রেনিং নিয়েছিলেন রায়গঞ্জের ফরেস্টে ট্রেনিংয়ে। বালুরঘাটেও ট্রেনিং নেওয়া হয়েছিল। পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছেন তিনি। যুদ্ধের সময় শরীরের একাধিক জায়গায় গুলি লাগে তাঁর। পরিবারের দাবি, অস্ত্রপচার করে তিনটি গুলি বার করতে পারলেও একটি গুলি তাঁর শরীরেই রয়ে গিয়েছিল। তা নিয়েই এতদিন বেঁচেছিলেন। বাসুদেববাবুর ছেলে অভিজিৎ সরকার, বাংলাদেশের বিদ্যুৎ দপ্তরের ইঞ্জিনিয়ার পদে কর্মরত, এবং বিশ্বজিৎ সরকার রায়গঞ্জের কর্ণজোড়ায় থাকেন।

ঘটনায় ক্ষুব্ধ এপারের পরিজনরাও। সদ্য পিতাকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ বিশ্বজিৎ সরকার ওরফে বাপি। তাঁর মাসি মিতা সাহার বক্তব্য, ‘সকালবেলায় জামাইবাবুর মৃত্যু সংবাদ পাই। আজ বিকেলে বাংলাদেশের জয়পুরহাট জেলার খঞ্জনপুর শ্মশানে মৃতদেহ শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমার জামাইবাবুর বিশাল নাম ছিল। প্রতিবছর সরকারের তরফে পুরস্কার পেত। তাঁর মৃত্যুর পর পুলিশ ও বিজিবি কেউ আসেনি, এর থেকে লজ্জাজনক ব্যাপার কিছু হতে পারে না।’
আরও পড়ুন: